বৈদ্যুতিক মোটর এবং এর বিস্তারিত আলোচনা
মোটর কি?
মোটর হল এমন একটি কৌশল এবং ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে পারি যার মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইনপুটে দিলে মেক্যানিকাল পাওয়ার কে আউটপুটে পাওয়া যায় সেটিই মোটর। এটি ঠিক জেনারেটর এর উলটো।
মোটরের প্রকারভেদ:
মোটর প্রধানত দুই প্রকার যথা-
- এসি মোটর
- ডিসি মোটর
এসি মোটর:
এসি মোটর একটি ইলেকট্রিক মোটর যা অল্টারনেটিং কারেন্ট (এসি) দ্বারা চালিত হয়। এসি মোটর সাধারণত দুটি মৌলিক অংশ দয়ে গঠিত, একটি ঘূর্ণায়মান চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরির জন্য পরবর্তী তড়িৎ প্রবাহকারী একটি বাইরের স্ট্যটর এবং দ্বিতীয় আবর্তিত চুম্বকীয় ক্ষেত্রে তৈরির জন্য একটি অভ্যন্তরীণ রোটর শ্যফটের সাথে সংযুক্ত থাকে।
ডিসি মোটর:
ডিসি মোটর এমন একটি ইলেকট্রিক মোটর ডাইরেক্ট কারেন্ট(ডিসি) দ্বারা পরিচালিত। ডিসি মোটর প্রধানত দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত, একটি হচ্ছে ফিল্ড অপরটি আরমেচার।
ডিসি মোটরের মোলতত্ত্বঃ
যখন আরমেচার কে ফীল্ড পোলের দ্বারা উৎপন্ন চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে বসিয়ে ঘুরান হয় তখন ফ্যারাডের বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় আবেশ তত্ত্ব অনুযায়ী আরমেচার পরিবাহিতে ভোল্টেজ আবিষ্ট হয়। এবং আরমেচার সার্কিট টি আবদ্ধ থাকলে তা দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। আর যদি আরমেচার সার্কিট টি কে বাইরের কোন বৈদ্যুতিক উৎসের সাথে সংযোক্ত করা হয় তবে আরমেচার কন্ডআক্টরে বল সৃষ্টি হয়। ফলে আরমেচার টি ঘুরতে শর করে।উৎপন্ন বলের পরিমান F=BIL নিউটন এবং এর দিক নির্ধারণ করা হয় ফ্লেমিং এর বাম হস্ত নিয়ম দ্বারা।
F= যান্ত্রিক বল
B= ফ্লাক্স ঘনত্ব
I= কন্ডাক্টরে প্রবাহিত কারেন্ট
L= পরিবাহির দৈর্ঘ্য
ডিসি মোটরের কার্যপ্রণালীঃ
উপরোক্ত চিত্রের সাহায্যে একটি ডিসি মোটরের কার্যপ্রণালী দেখানো হয়েছে। কারেন্ট বাহি কোন কন্ডাক্টর কে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে চৌম্বক ক্ষেত্রের বলরেখা এবং কারেন্টবাহি কন্ডাক্টরের বলরেখা পরস্পরের প্রতিক্রিয়ায় লব্ধি চৌম্বকখেত্র কন্ডাক্টরের এক পার্শ্বে প্রবল এবং অন্য পার্শে দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে কন্ডাক্টর কোন পার্শে সরবে, তা চৌম্বক ক্ষেত্রের অভিমুখ এবং কারেন্ট প্রবাহের অভিমুখের উপর নির্ভর করবে। এটা ফ্লেমিং এর বাম হস্ত বিধি দ্বারা নির্ণীত হয়।
ফ্লেমিং এর বাম হস্ত বিধিঃ
তর্জনী, মধ্যমা এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী পরষ্পরের সমকোনে রাখলে তর্জনী ও মধ্যমা যথাক্রমে চউম্বক্ষেত্র ও কারেন্ট প্রবাহের অভিমুখ এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী কন্ডাক্টরের গতি অভিমুখ নির্দেশ করবে।
ডিসি মোটরের প্রকারভেদ:
ডিসি মোটর প্রধানত তিন প্রকার যথা-
- সিরিজ মোটর
- শান্ট মোটর
- কম্পাউন্ড মোটর
কম্পাউন্ড মোটর আবার দুই প্রকার যথা-
- কিউমুলেটিভ কম্পাউন্ড মোটর
- ডিফারেন্সিয়াল কম্পাউন্ড মোটর
সিরিজ মোটর:
এতে ফিল্ড কয়েল আরমেচারের সঙ্গে সিরিজে সংযুক্ত থাকে।
শান্ট মোটর:
এতে ফিল্ড কয়েল আরমেচারের সঙ্গে প্যারালালে সংযুক্ত থাকে।
কম্পাউন্ড মোটর:
এ মোটরে দুটি ফিল্ড কয়েল থাকে। একটি আরমেচারের সঙ্গে প্যারালালে এবং অন্যটি সিরিজে সংযুক্ত থাকে।
ডিসি মোটরের লসঃ
ডিসি মোটরের লস প্রধানত তিন প্রকার যথা:
আরমেচার কপার লস
এই লস ফুল লোড লসের ৩০% হতে ৪০%.
ফিল্ড লস
- শান্ট ফিল্ড লস
- সিরিজ ফিল্ড লস
- ইন্টার পোল ফিল্ড লস
এই লস ফুল লোড লসের ২০% হতে ৩০%.
ব্রাশ কন্টাক্ট লস
ম্যাগনেটিক বা আয়রন লস
- হিস্টেরেসিস লস
- এডি কারেন্ট লস
এই লস ফুল লোড লসের ২০% হতে ৩০%.
ম্যাকানিকেল লস
- ফ্রিকশন বা ঘর্ষণ জনিত লস
- এয়ার ফ্রিকশন বা উইন্ডেজ লস
ডিসি মোটরের এডি কারেন্ট এবং হিস্টেরেসিস লস কমানোর উপায়
এডি কারেন্ট লস কমানোর উপায়ঃ
আয়রন কোরকে একটি আস্ত লোহার পরিবর্তে পাতলা পাতলা পাত বা শীট দ্বারা তৈরি করা হয় এবং এই পাতের দুই পার্শে ভারনিশ ইনসুলেশান দেয়া হয়।ফলে এডি কারেন্ট এর জন্য অতি উচ্চ মানের রেজিস্ট্যান্স সৃস্টি হয়।
হিস্টেরেসিস লস কমানোর উপায়ঃ
কাঁচা লোহা এবং এনীলড ধীরে ধীরে আতপ কমিয়ে কঠিন করা ইস্পাতের শীটের ব্যবহার করে হিস্টেরেসিস লস কমানো যায়।